অচেনা শহর
- কুমার সৌরভ ২৮-০৪-২০২৪

এই শহরকে আমি চিনি না দেখি নি কখনও
যে মাটিতে প্রথম কান্নার চিৎকার
ছুড়েছিলাম আকাশে
সেই মাটি ও আকাশ নয় এ।
কংক্রিট বিছানো যে সড়কে
বালকের কঁচি পা বিক্ষত হতো
সেই সড়কটি হারিয়ে গেছে।
শৈশবে একটি গাড়ির হেডলাইটের আলো বিচ্ছুরণ
দেখতে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতাম পুকুরপাড়ে
দৃষ্টি ছেড়ে মল্লিকপুর সড়কে
সেই পুকুরপাড়টি হারিয়েছে বহু আগে,
মল্লিকপুর সড়কও গেছে দৃষ্টির আড়ালে।
এখন পিপড়ার সারির মতো বয়ে চলা গাড়ির বহর
আমাকে প্রতিদিন প্রতিক্ষণ বাধা দেয় চলার পথে।
যে শহরে সকলেই ছিল পরিচিত পরিজন
সেখানে এখন খোলা রাস্তায় দুই ঘণ্টা দাঁড়ালেও
কেউ বলে না - কেমন আছো?
বড় বেশি অচেনা সকলে, এরা কারা?
মনে পড়ে ঈদ অথবা পৌষ সংক্রাম্তির সকালে
বন্ধুর দল বেরিয়ে পড়তাম শহর চড়তে
এ বাসা ও বাসা পেট পুরে পিঠাপুলি খেয়ে
দুপুরে ফিরতাম এক থলে পিঠা নিয়ে
মনে হতো থলে ভরা পিঠা নয়
এগুলো মাসীমা খালাম্মা আপা দিদিমনিদের
আশীষ আর স্নেহের উপচানো ভাণ্ডার,
হায় এখন পার্বনের সকালে পাশের বাসা থেকেও
কেউ বলে না- আসো একটু চা খেয়ে যাও বাপু।

শীতের রোদ নেই এখন নেই ঝমঝম বৃষ্টির আমন্ত্রণ
খোলা গোচারণ ভূমি নেই, নেই রাখাল বাঁশি
গরুর পাল ঘরে ফেরে না কালাঞ্জির মলিন আলোয়
কামারখাল নেই, বাঁশের উঁচু সেতু থেকে
ঝাঁপ দিতে দেখি না কোন বালক দল
অথচ এমন জলে ঝাপিয়ে মায়ের কানমলা খাওয়া
ছিল আমাদের ছুটির দিনের রুটিন দুষ্টুমি।

এই শহর কার জানি না আমি
শুধু দেখছি বিহ্বল কতিপয় মুখ
জিহ্বা আড়ষ্ট করে চুপিচুপি অশ্রুপাত করে
ভয় ঘিরে ধরে ঘন কুয়াশার মতো
ঝাপসা করে দেয় চোখের সীমানা।

এ শহর তো আমার মায়ের আঁচল বিছানো
সুশীতল ভরসার ছায়াঘেরা কোল নয়
এখানে ভালবাসা দূরে মিলিয়ে গেছে
এ শহর বড় বেশি অচেনা
ভিড়ের ভারে এড়িয়ে চলার কষ্টে
লাল চোখের দাবড়ানোয় খুঁজি
আমার হারানো শৈশব।
২৪.১১.২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।